সেজুঁতি রহমান প্রিয়া। মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চ মাধ্যমিকে ঢাকার একটি কলেজে ভর্তি হন। মাধ্যমিকের শুরু থেকেই প্রিয়ার বন্ধুত্ব হয় সাকিল আহমেদের সঙ্গে। সেখান থেকে শুরু হয় ভালো লাগা। এরপর দু’জনের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। তারা ছিলেন সমবয়সী। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে পা রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা স্বপ্নের মালা গাঁথেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতেই দু’জনের সিদ্ধান্তে বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়া এক ছাদের নিচে থাকতে শুরু করেন। দু’জনের ইচ্ছা ছিল
কিন্তু স্বপ্নের শেষ দেখা হয়নি প্রিয়ার।
দু’জনের সম্পর্কের মাঝে শুরু হয় ভুল বোঝাবুঝি। বিভিন্ন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে প্রতিদিন হয় ঝগড়া। সাকিল একইভাবে আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। মুহূর্তের মধ্যেই সব তছনছ হয়ে যায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে সম্পর্কের ইতি টানেন প্রিয়া। প্রিয়াও সাকিলের সঙ্গে জিদ করে অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। তার সঙ্গেও এক ছাদের নিচে থাকতে শুরু করেন।
শুধু প্রিয়া নন, এমন অনেক তরুণ এমন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। নানা কারণে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চান না। তরুণদের মধ্যে কেন এই অনীহা? এমন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বিয়ের প্রতি অনাগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বড় অংশই এখন বেকার। বয়স বাড়লেও বিয়ে নিয়ে তাদের মধ্যে চরম উদাসীনতা ও হতাশা বিরাজ করে। বিয়ে করলেও আগে কথা দেয়া থাকে যে যার মতো চলার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং সমাজকল্যাণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক মানবজমিনকে বলেন, ১৫-২০ বছর আগে যেটি আমরা উন্নত দেশগুলোতে দেখেছি সেই অবস্থা এখন বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে আনুমানিক ৮ শতাংশ লোক বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়া একসঙ্গে থাকছে। এই ৮ শতাংশ লোক সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং পেশা জীবনে প্রতিষ্ঠিত। এরা আর্থিকভাবে সঙ্গতিপূর্ণ এবং অতিমাত্রায় ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তারা একক কোনো সম্পর্কের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে চায় না।
এদিকে বেকারত্বের হারও দিন দিন বাড়ছে। বেকার যুবক-যুবকেরা চাকরির জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে। আগ্রহ হারিয়ে বিয়ের জন্য সময় এগিয়ে দিচ্ছে। এখানে রাষ্ট্রেরও কিছুটা দায় আছে। লিভ টুগেদার এবং বেকারত্বের সংখ্যা যদি এভাবে বাড়তে থাকে মানুষ বিয়ে করার আগ্রহ আরও হারিয়ে ফেলবে।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থা একত্রিত হয়ে বসবাসের মাধ্যমে জীবন পার করা। সেই জায়গায় একটা বড় ছন্দপতন ঘটবে। এই সমাজ ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র সকল নাগরিকের এই বিষয়ে কতটা সুযোগ-সুবিধা দেবে এর একটা দায় বা করণীয় রাষ্ট্রের রয়েছে। বিয়ের স্থান পূরণে যদি বিকল্প ব্যবস্থাগুলোর সুযোগ দেয় তাহলে আমাদের পরিবার ব্যবস্থার ধরন আরও ভাঙনের মুখোমুখি পড়বে।
এটি এক ধরনের সামাজিক অসুখ। তিনি আরও বলেন, আশপাশে বিাহবন্ধনের পর বিচ্ছেদের তিক্ত অভিজ্ঞতা অথবা প্রতিদিন গণমাধ্যমে ডিভোর্সের খবরগুলো উঠে এসেছে যেভাবে তাতে নতুন যারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন তাদের মধ্যেও একটা ভয় ও অনীহা কাজ করে। ব্যক্তির মধ্যে আচরণগত একটা অস্থিরতা বা ক্ষত তৈরি হয়। একজনের তিক্ত অভিজ্ঞতা এক রকম। এই অনাগ্রহের পিছনে বিভিন্ন কারণ সক্রিয়। প্রথমত: দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা, বিচ্ছেদের হার কমিয়ে আনা, এই বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে থেকে মানুষের বেরিয়ে আসতে হবে।
অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী অথবা ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী তিনিও কিন্তু বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হতে চান। কিন্তু তিনি এক ধরনের অনিশ্চয়তায় ভোগেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. তানিয়া রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমরা উন্নত দেশগুলোকে ফলো করতে করতে তাদের মতো হয়ে যাচ্ছি।
ইদানীং মারাত্মকভাবে দেখা যাচ্ছে লিভ টুগেদার। যদি কোনো দায়বদ্ধতা, দায়িত্ব ছাড়া সমস্ত চাহিদা পূরণ হয় তাহলে বিয়ের আগ্রহ স্বাভাবিকভাবে কমে যাবে। তবে যারা এখনও ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে আছেন তাদের মধ্যে বিয়ের চলটা এখনও ঠিক রেখেছেন। বিয়ের অনাগ্রহটা নতুন প্রজন্মের জন্য হুমকি স্বরূপ। যতই কষ্ট বা অশান্তি থাকুক সবাইকে ঠিক সময়ে একটি ঠিকানা তৈরি করা উচিত। গড়ে তোলা উচিত পারিবারিক বন্ধন।
বিয়ে ও তালাক সংক্রান্ত যে কোনো আইন বা জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনা বা পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করুন আমাদের কনসালট্যান্ট এর সাথে।
কাজী অফিস এর ঠিকানা:
Confidence Tower
Shahjadpur Bus-Stand, Gulshan, Dhaka-1212
হটলাইন: 01716159764
ওয়েবসাইট: https://www.e-kazi.com/
ইমেইল: info@e-kazi.com